শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ সপ্তাহিক ছুটি কয়দিন হওয়া উচিত?
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ সপ্তাহিক ছুটি দুইদিন নিয়ে যাদের চুলকানি তাদের উদ্দেশ্যে বলছি যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানএ সপ্তাহিক ছুটি তিন দিন হওয়া উচিত। হ্যাঁ, সত্যিই দেখছেন - ৩ দিন ছুটি প্রয়োজন, এক দিন পরপর ক্লাশ হওয়া উচিত। দেশের প্রতিটা পাবলিক ইউনিভার্সিটি তে এরকমই ক্লাশ হয়- সপ্তাহে ৩/৪ দিন ক্লাশ হয়। তাতে পাবলিক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা মূর্খ হয়ে যাচ্ছে না, বরং তারাই দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
ইউরোপ, আমেরিকা বা কানাডা এমনকি মধ্যপ্রাচ্যের - উন্নত দেশগুলোতে একটানা ২/৩ মাস বন্ধ থাকে। তাতে ওদের ছেলেমেয়েগুলা মূর্খ থাকছে না নিশ্চয়ই। আর আমাদের এখানে সারা বছর স্কুল কলেজএ ক্লাশ করিয়ে ভুজুং ভাজুং করিয়ে A+ এর বন্যা বইয়ে দেয়া হচ্ছে যারা মূলত কিছুই শিখে না অধিকাংশ ক্ষেত্রেই।
শিক্ষা তথা জ্ঞান অর্জন পেশি শক্তির কাজ নয়, এটা একান্তই মানসিক কাজ। মস্তিষ্ক ও শরীর যত রিল্যাক্স থাকবে, জ্ঞান অর্জনে মন ততই আগ্রহী থাকবে। জ্ঞান অর্জন কে পণ্যদ্রব্য উতপাদনের সাথে মেলালে চলবে না। মানুষের মন কোন মেশিন বা যন্ত্র নয়। মেশিন এ যেমন যত বেশি কর্মঘন্টা বাড়ানো যায়, উতপাদন তত বারে। কিন্তু জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে এটা ঠিক উলটো ঘটে। মস্তিষ্ক তথা মনে যত বেশি চাপ পরে, জ্ঞান অর্জন তত কমে। এখানে আবেগের কোন ঠাই নেই। তাই শিক্ষার্থীদের যেমন জ্ঞান অর্জনের জন্য চাপহীন সুস্থ্য মনের জন্য বিরতি দরকার, একইভাবে শিক্ষকেরও শিক্ষার্থীদের কার্যকরি শিক্ষা প্রদানের জন্য চাপহীন মস্তিষ্কের দরকার ভালো প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য৷ সুতরাং, একথা অনস্বীকার্য যে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কার্যকরী শিখন শিখানো প্রক্রয়ার জন্য যথেষ্ঠ বিরতি বা বিশ্রাম প্রয়োজন। ভিন্ন কথায়, একদিনের শিখন কাজ গ্রহণ ও তা বুঝার জন্য অবশ্যই সপ্তাহক ছুটি দুইদিন বা তার বেশি প্রয়োজন।
এবার আসা যাক অভিবাবকদের চিরন্তন সেই ডায়ালগে, "যতক্ষন বই নিয়া বইসা থাকে ততক্ষণই ভালো।" কিন্তু এটা একেবারেই ফালতু যুক্তি। আপনার ছেলেমেয়ের মধ্যে জ্ঞান অর্জনের স্পৃহা যদি আপনি না জাগাতে না পারেন তাহলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ২৩ ঘন্টা বই নিয়ে বসে থাকলেও তার জ্ঞান অর্জন হবে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক ছেলেমেয়েকে দেখেছি যারা দিনে ১০-১২ ঘন্টা পড়ত এবং তারাই মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। তাদের পিতামাতারা ছোটবেলায়ই বাচ্চাদের মনে জ্ঞান অর্জনের উদ্দীপনা তৈরি করেছিলেন। আর শুধু A+ গ্রাস করার জন্য উতসাহিত না করাই ভালো।
অন্যদিকে একটু ভেবে দেখুন, আপনার ছেলে বা মেয়ে সকাল ১০ টায় ক্লাশের জন্য সকাল ৯ টা থেকে যুদ্ধ শুরু করলো, যুদ্ধ শেষ হলো ৪টায়, ৭/৮টা ক্লাশের বকবকানি শুনে বিদ্ধস্ত হয়ে বাড়ি ফিরল ৪:৩০/৫ টায়। একটু সোজা হতে হতে পরের দিনএর পড়া তৈরি করার জন্য আবার বসল টেবিলে। হয়তো রাত ১১ টা বা টা পর্যন্ত। আর মাঝে টিউশন টিচার থাকলে ত কথাই নেই। হয়তো গভীর রাতে ঘুমাতে গেলো পরের দিনের সেই একই যুদ্ধের কথা কল্পনা চোখে রেখে । তো তার খেলা বা বিনোদনের সময়টা আপনি কেড়ে নিলেন যে? একবার ভাবুন তো, লেখাপড়ার জন্য জীবন, নকি জীবনের জন্য লেখাপড়া? আপনার ছেলেমেয়ের জীবনটার আনন্দ নষ্ট হচ্ছে না? তো এক্ষেত্রে সপ্তাহে বন্ধ দুইদিন তো কম, আরো বেশি হওয়া উচিত। অন্তত ক্লাশে শিক্ষকদের দেওয়া কাজ, পড়া তৈরি করতে হলও গ্যাপ দরকার, খেলাধুলা না হয় বাদই দিলাম।
কিছু শিক্ষার্থী বলেছে যে শুক্রবার পারিবারিক সামাজিক বিভিন্ন কারণে ব্যস্ত থাকতে হয়। এক্ষেত্রে শনিবার তারা নিজের মত নিজেকে সময় দিতে পারে, যেসব বিষয়ে পড়া পিছিয়ে পরেছে সেগুলো পূরণ করতে পারে। এটা তো তাদেরই লাভ। আর সারা সপ্তাহ ক্লাশরুমে কাটালে শিক্ষার্থী নিজে পড়ার সময় কখন? শনিবার দিনটা মনে হয় তাদের নিজেদের পড়ার সময়টা করে দেয়। মনে রাখা উচিত, 'বিশ্রামা ও কাজ একসঙ্গে গাঁথা, নয়নের অংশ যেমন নয়নের পাতা।' বিশ্রাম দিলে কাজের গতি বাড়ে, কমে না।
এরপরও যাদের চুলকানি কমেনি তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, আপনারা রাস্তায় হকার এর থেকে মলম কিনে শরীরে লাগিয়ে নিবেন। আর সাথে সকল সরকারী অফিস আদালত ও শনিবার খোলা রাখার জন্য গলা বড় করবেন, শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ করকম আর বাকিদের ক্ষেত্রে মিন মিন করবেন না। এক চোখে তেল আরেক চোখে নুন বেচা বন্ধ করুন।
স্যার আমাদের দেশে এটা কখনো বাস্তবায়িত হতে পারবে না। মানুষ পড়াশোনা করে নিজের জ্ঞান অর্জনের জন্য কিন্তু সে পড়াশোনাকে মুখস্ত বিদ্যার ট্যাবু করে রাখা হয়েছে। শিক্ষাদান পদ্ধতি এখনো মুখস্ত বিদ্যানির্ভর। এবং অভিভাবকরা তো আছেই তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ১০০ বছর পরেও বদলানো যাবে না।
ReplyDelete